World System Theory: কেন্দ্র-প্রান্তিকের অসম সম্পর্ক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুধাবনে যে সকল তত্ত্ব মার্কসবাদ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, World System Theory তন্মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী। এই তত্ত্ব শুধু মানবিক বা সমাজ বিজ্ঞানকেই প্রভাবিত করেনি, একই সাথে প্রভাবিত করেছে রাজনীতি, ইতিহাস, ভূগোল ও দর্শনের শিক্ষানুরাগীদের। এই তত্ত্বটি প্রধাণত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিশদভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। কারণ, এই তত্ত্বানুসারে আধুনিক বিশ্বের নানা অনুষঙ্গ ও প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বৈশ্বিক অর্থনীতি। World System Theory- প্রধাণত মার্কসবাদের তিনটি ধারা থেকে অনুপ্রাণিতঃ লেনিনের সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ তত্ত্ব থেকে; আন্দ্রে গুন্দার ফ্রাংকের (Andre Gunder Frank) মত নির্ভরতা তত্ত্বের (Dependency School ) প্রবক্তাদের লেখনি থেকে; এবং ফরাসী এনালস স্কুলের (French Annales School) দার্শনিক, বিশেষ করে ফারনান্দ ব্রাউদেলের (Fernand Braudel) লেখনি থেকে। World System তত্ত্বটি বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করেন ইমানুয়েল ওয়ালেরস্টেইন (Immanuel Wallerstein), এবং পরবর্তীতে আরও অনেক লেখক তত্ত্বটির বিকাশে সাহায্য করে।
World System তত্ত্বটির কী নিয়ে আলোচনা করে?
World System তত্ত্বটিকে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের আলোকে ভাগ করা যায়। যথাঃ (১) তত্ত্বটি জ্ঞানের শাখা হিসেবে এবং বিশ্লেষণী কাঠামো হিসেবে সিস্টেম বা কাঠামোগত দিককে অনুসরণ করে; (২) সামাজিক নানা প্রয়োজনীয় কাঠামো কেন ও কিভাবে গড়ে উঠেছে তত্ত্বটি তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে; এবং (৩) তত্ত্বটি বিশ্বকে আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করে এবং দেখানোর চেষ্টা করে কেন এই বিভাজনটি একটি সিস্টেমকে অনুসরণ করে হয়ে থাকে।
কিছু বিশেষজ্ঞ এমনও বলে থাকেন যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুধাবনে World System তত্ত্ব সবচেয়ে উপযোগী কাঠামোগত বিশ্লেষণ প্রদান করে। আদতে এই তত্ত্বটি বিশ্ব রাজনীতিকে একটি ভিন্ন দৃষ্টিতে ব্যাক্ষা করে থাকে। এই তত্ত্বের কাছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুধাবনে রাষ্ট্র, কূটনীতিক, অরাষ্ট্রীয় সত্ত্বা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রমুখের তুলনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব অধিক/ সর্বাধিক। তত্ত্বের প্রবক্তা ওয়ালেরস্টেইনের প্রাথমিক গবেষণা জীবন কাটে আফ্রিকার দারিদ্র জীবনের নানারূপ অনুসন্ধানে। আফ্রিকার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন যে কেনো দারিদ্র এত দৃঢ়ভাবে গেথে রয়েছে অত্র অঞ্চলে বা এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় আমরা তার গভীরে ততক্ষণ যেতে পারবো না যতক্ষণ না আমরা রাষ্ট্রের গন্ডি পেড়িয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ না করবো। তিনি বলেন, এই স্থায়ী দারিদ্রের কারণ অনুসন্ধানে আমাদের অবশ্যয়ই আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাজনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের এই যে উচ্চ স্তরের বিশ্লেষণ (Higher Level of Analysis) তার প্রেক্ষিতেই নতুন ধারণা হিসেবে World System- এর আগমন ঘটে।
World System তত্ত্বের ‘World’ শব্দটি দ্বারা ভৌগোলিকভাবে সামগ্রিক বিশ্বের প্রতিচ্ছবি বুঝায় না, উপরন্তু, এই ভূগোলের সবচেয়ে ছোট অংশটিকে বুঝিয়ে থাকে যে অংশটি সর্বদিক বিবেচনায় অগ্রসর, এবং এই ছোট অংশটির প্রয়োজন বিবেচনায় ভূগোলের বাকী অংশ কাজ করে বা ছোট অংশের প্রতি বাকী অংশ নির্ভর করে। ওয়ালেরস্টেইনের ভাষায়, বর্তমানে উন্নত রাষ্ট্রের সমন্বয়ে World System- এর অত্র ক্ষুদ্র অংশটি গড়ে উঠেছে যে অংশ থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও শ্রম বিভাজনকে নির্দিষ্ট করা হয়। এছাড়াও, এই অংশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকও বৃহত্তর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্ব অনুসরণ করে।
World System তত্ত্বের দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই তত্ত্ব বৈশ্বিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে। বর্তমান World System-কে ওয়ালেরস্টেইন “আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা ()” বলে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, এই আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা পূর্ববর্তী বিশ্বব্যবস্থার উত্তরসূরি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে দুই ধরণের বিশ্বব্যবস্থা ছিলোঃ (১) বিশ্ব অর্থনীতি ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা (World Economies); (২) সাম্রাজ্য ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা (World Empires)। ওয়ালেরস্টেইন বলেন, আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা বস্তুত পূর্বতন অর্থনীতি নির্ভর বিশ্বব্যবস্থার সম্প্রসারিতরূপ। তিনি বলেন, পূর্বতন অর্থনীতি নির্ভর বিশ্বব্যবস্থার সাথে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মৌলিক পার্থক্য হলো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে সার্বভৌম রাষ্ট্রই হল সেই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রধান কর্মক। তবে, ওয়ালেরস্টেইনের ভাষায়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অর্থনৈতিক নির্ভর বিশ্বব্যবস্থার তুলনায় সাম্রাজ্য ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা বেশি স্থিতিশীল ছিলো। তবে, আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। এই স্থিতিশীলতার পিছনে বেশ কিছু অনুষঙ্গ কাজ করেছে যার মধ্যে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার আলোকে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে ওঠা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় গড়ে ওঠা কিছু সাংস্কৃতিক ভাবাদর্শ, কিছু আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ (যেমনঃ মুক্তবাজার অর্থনীতি, গণতন্ত্র, উদারতাবাদ ইত্যাদি) আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রেখেছে।
আমরা যদি বিশ্বব্যবস্থার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার কথা বলি, আমরা দেখতে পাবো প্রতিটি বিশ্বব্যবস্থারই স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাও তার থেকে আলাদা নয়। এই ব্যবস্থার যেমন শুরু ছিলো, যেভাবে এই ব্যবস্থা তার মধ্য সময়টি পার করছে, আগত ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থার ইতি ঘটবে। এই ব্যবস্থার শুরু হয়েছিলো ইউরোপে ষষ্টদশ শতকে, যখন জমিদারি ব্যবস্থা ছেড়ে পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটে। শুরুর খুব পরপরই ঔপনিবেশিকতার হাত ধরে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। The Modern-World System শিরোনামে ওয়ালেরস্টেইন তিনটি মোটা পুস্তক রচনা করে যেখানে তিনি বিশদাকারে প্রাথমিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশ নিয়ে আলোচন করেন। এই গ্রন্থে তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার গতিপথ পুঁজিবাদের গতিপথকে অনুসরণ করেই এগিয়েছে। ওয়ালেরস্টেইন এ পর্যায়ে রুশ অর্থনীতিবিদ নিকোলাই কোন্দ্রাতিফের (Nikolai Kondratieff) কথা উল্লেখ করেন। কোন্দ্রাতিফ বলেন পুঁজিবাদের ধারা ক্রমেই বেড়ে চলেছে স্বাভাবিক গতিতে যাকে অর্থনীতিতে কোন্দ্রাতিফ ঢেউ (Kondratieff Waves) বলা হয়। যদিও কোন্দ্রাতিফের ঢেউ স্বাভাবিক নিয়মে চলে, তবে এর মানে এই নয় যে পুঁজিবাদের বিস্তার একইগতিতে চলেছে, এই বিস্তারের গতিপথে কখনো দ্রুত হয়েছে, কখনো হ্রাস পেয়েছে। ওয়ালেরস্টেইন বলেন, পুঁজিবাদের এই গতিপথে পুঁজিবাদকে নিয়েও নানা সমালোচনা উত্থিত হয়েছে। এর অন্যতম হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ভোগের অতিরিক্ত উৎপাদন করা হয় যা মুনাফার তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, এই প্রবণতা যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখন সঙ্কট তৈরি হয় এবং এই সঙ্কট থেকে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থার ডাক ওঠে। ওয়ালারস্টেইন বলেন যে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা এখন টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে, শীগ্রই এই ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধরণের অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের আগমন ঘটবে।
ওয়ালেরস্টেইনের বিশ্বব্যবস্থা তত্ত্বের শেষধাপে রয়েছে ভৌগোলিক বিভাজন। তিনি তার তত্ত্বে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাকে ভৌগোলিক বিবেচনায় তিনটি অংশে ভাগ করেন। যথাঃ কেন্দ্র, মধ্যবর্তী এবং প্রান্তিক। কেন্দ্রে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু দেশ যারা আন্তর্জাতিক পরিক্রমায় সবচেয়ে শক্তিশালী। এই কেন্দ্রের দেশগুলো উন্নত জীবনযাপন করে, তাদের আর্থ-সামাজিক কাঠামো অনেক দৃঢ়, শিক্ষাদীক্ষায় তারা অনেক উন্নত, তাদের শিল্পোপ্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফা অর্জন করে, এবং তাদের রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ও শক্তিশালী বলপ্রয়োগকারী বাহিনী। এই বিভাজনের একদম প্রান্তে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল ও শোষিত রাষ্ট্রগুলো। আবার এই প্রান্ত থেকেই কেন্দ্রের শিল্পো-প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাঁচামালের যোগান ঘটে। এই দুর্বল রাষ্ট্রগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত, তাদের জীবনমান খুব নিম্নমানের, তাদের জনসংখ্যার ঘনত্বও কেন্দ্রের রাষ্ট্রের তুলনায় অধিক।
ওয়ালেরস্টেইনের ভাষায়, বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র ও প্রান্তের রাষ্ট্রের মাঝে নির্ভরতার ভিত্তিতে সম্পর্ক তৈরি হয়, এবং সে নির্ভরতা আদতে অসম বিনিময়ের (unequal exchange) ফলে তৈরি হয়। অসম বিনিময়ের মাধ্যমে কেন্দ্রের রাষ্ট্রগুলো প্রান্তের রাষ্ট্রগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদকে সিস্টেম করে শোষণ করে যাতে কেন্দ্রের মুনাফা নিশ্চিত হয় এবং প্রান্ত কেন্দ্রের প্রতি আরও বেশি নির্ভর হয়ে পড়ে। ওয়ালেরস্টেইনের এই বয়ান ক্ল্যাসিকাল মার্কসবাদের বয়ানের প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র। অর্থাৎ, কার্ল মার্কস তার মার্কসবাদ তত্ত্বে শোষণ বলতে বুঝিয়েছেন উৎপাদনের উদ্ধৃত্ত মুনাফাকে, আর ওয়ালেরস্টেইনের ভাষায় শোষণ হল উন্নত ও অনুন্নত রাষ্ট্রের মাঝে অসম বিনিময় (অনুন্নতের কাঁচামাল শোষণ করে উন্নত তার মুনাফা গড়ে নেয়)। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র ও প্রান্তের মাঝে রয়েছে মধ্যবর্তী অংশ।
এই রাষ্ট্রগুলো কেন্দ্রকে অনুসরণ করে শিল্পোন্নায়নের দিকে এগিয়েছে, আবার কাঁচামালের যোগান নিজেরও কিছু আছে, প্রান্ত থেকেও যোগান আসে। তবে শিল্পোন্নায়ন থেকে তারা কেন্দ্রের মত এত মুনাফা লাভ করে না। পাশাপাশি এরাও কেন্দ্রে বিভিন্ন কাঁচামাল সরবারহ করে (যেমনঃ রাশিয়া ইউরোপকে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল দেয়, চীন কেন্দ্রের উৎপাদনের প্রয়োজনীয় শ্রম দেয় ইত্যাদি)। বস্তুত, এই মধ্যবর্তী রাষ্ট্রগুলো একটি পরিবর্তনশীল ধাপ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ, এই ধাপে এখন অনেক রাষ্ট্র ছিলো যারা পূর্বে কেন্দ্রের অংশ ছিলো (যেমনঃ রাশিয়া) । আবার, এই ধাপে এমন কিছু দেশ আছে যারা প্রান্তের সীমা ছাড়িয়ে এখন মধ্যবর্তী অবস্থায় এসেছে (যেমনঃ চীন)। ওয়ালেরস্টেইনের ভাষায়, এই মধ্যবর্তী রাষ্ট্রগুলো আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শোষক ও শোষিতের মধ্যবর্তী অংশ হিসেবে তারা কাজ করে। এরা দুইভাবে বিশ্বব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখে। যথাঃ (১) কেন্দ্রের প্রতি যে বিরোধিতা উচ্চারিত হয় তা হ্রাস করে এবং কেন্দ্রের মুনাফার একটি অংশতে ভাগ বসিয়ে। ফলে, মধ্যবর্তীতের বাঁধাকে ডিঙিয়ে প্রান্তের পরিবর্তন ও সমালোচনার কথা কেন্দ্রের কানে পৌঁছে না। (২) কেন্দ্রের শ্রম চাহিদা মেটানোর একটি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে এই মধ্যবর্তীরা কাজ করে এবং সাথে কেন্দ্র শ্রমের মজুরির ক্ষেত্রে যে শোষণ অব্যহত রাখতে চায় সেখানে একটি ভারসাম্য আনে, অর্থাৎ শ্রমের মূল্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে (যেমনঃ চীন, ব্রাজিল ও তুরস্ক)।
সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ালেরস্টেইনের অধিকাংশ কাজ আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার বর্তমান প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। অর্থাৎ, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে যে স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে যাকে মিশেল ফুঁকো “End of History” বলে সম্বোধন করেছেন, ওয়ালেরস্টেইনের কাছে সে সম্বোধন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তিনি বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তিতে উদারবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আর কোন আঘাত আসবে না এটি সত্য নয়। বিপরীতে, তিনি বলেন, পুঁজিবাদ নির্ভর আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা এখন সবচেয়ে সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, এই সিস্টেম যদি সত্যিই পাল্টে যায় তার বিপরীতে কোন ধরণের ব্যবস্থার আগমন ঘটবে সে সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী ওয়ালেরস্টেইন করেন নি। তবে, তিনি বর্তমান সিস্টেমের যে অসমতা রয়েছে তা প্রশমনের নিমিত্তে নতুন সিস্টেমের আবির্ভাব ঘটতে পারে বলে জানান।
উপসংহারঃ
World System Theory আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুধাবনে একটি ভিন্ন (radical) দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই তত্ত্বটি বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আদতে গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কল্যাণে, এবং সে সম্পর্ক পরিচালিতও হয় একই পথে। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই বর্তমান দুনিয়ার প্রধান পরিচায়ক; এবং এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পরিক্রমার যাবতীয় অনুষঙ্গকে প্রভাবিত করে। আসলে World System Theory আমাদের ইতিহাস ও ভূগোলের আলোকে বৈশ্বিক গতিবিধি ও পরিবর্তনের ধারাকে বিশ্লেষণ করতে শেখায়, বিশেষ করে কেন্দ্র, মধ্যবর্তী ও প্রান্ত এই তিনটি ভাগে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থাকে বুঝতে শেখায়। এবং সর্বশেষে ওয়ালেরস্টেইন বলেন, আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে বেশি সময় বাকী নেই যা সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে পাল্টে দিতে পারে।
ভাবানুবাদকঃ
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মূল লেখকঃ
Stephen Hobden
University of East London
London, United Kingdom
.png)

No comments